বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৩ অপরাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবে যা করণীয় জমি আপনার, দখল অন্যের! কী করবেন? রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে সংবিধান, আইনী নৈরাজ্য ও অতীত ইতিহাস! শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির মিথ্যাচার বনাম সাংবিধানিক সমাধান! সহায় সম্পত্তি পুণ্যের কাজে ওয়াক্ফ গঠন ও প্রাসঙ্গিকতা! শেকড়ের সন্ধানে সাঁইজির ধামেঃ লালন কি জাত সংসারে— রক্তাক্ত মাহমুদুর রহমানের কুষ্টিয়ায় আগমন বনাম দুধের মাছিদের আনাগোনা! জনপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্যার সম্বোধন কতটা সংবিধান ও আইনসম্মত! ক্রেতা ঠকে গেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে যত আইনগত প্রতিকার! আইনে জামিন চর্চা বনাম বিচারকের পদত্যাগের দাবীতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ!
দেনমোহর পরিশোধ ব্যতিত স্ত্রী সহবাসে অস্বীকৃতি জানাতে পারে

দেনমোহর পরিশোধ ব্যতিত স্ত্রী সহবাসে অস্বীকৃতি জানাতে পারে

 

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক: দেনমোহর স্বামীর ঋণ, যা স্বামী তাঁর স্ত্রীকে পরিশোধ করতে বাধ্য। ‘সহবাসের আগে এবং পরে স্ত্রী স্বামীর কাছে দেনমোহর দাবি করতে পারে এবং স্বামী পরিশোধে ব্যর্থ হলে স্ত্রী সহবাসে যেতে অস্বীকার করতে পারেন।’ (মাহমুদা খাতুন বনাম আবু সাইদ ২১ ডি.এল.আর)। এ অজুহাতে স্বামী স্ত্রী থেকে দূরে অবস্থান করলেও তা পরিশোধে বাধ্য। (১১ ডি. এল. আর. পৃষ্ঠা ১২৪)

দেনমোহর নির্ধারণ পদ্ধতি
মুসলিম আইনে দেনমোহর স্ত্রীর প্রতি স্বামীর শ্রদ্ধার নিদর্শণ। যা পরিশোধে স্বামীর উপর দায় আরোপিত হয়েছে। দেনমোহর কত হবে তা নির্ণয়কালে স্ত্রীর পিতার পরিবারের অন্যান্য মহিলা সদস্যদের ক্ষেত্রে যেমন স্ত্রীর বোন, খালা, ফুফুদের ক্ষেত্রে দেনমোহরের পরিমাণ কত ছিল তা বিবেচনা করতে হয়। (হামিরা বিবি বনাম যুবাইদা বিবি, ১৯১৬, ৪৩ আই. এ. পৃষ্ঠা, ২৯৪)। তাছাড়া স্ত্রীর পিতার আর্থ-সামাজিক অবস্থান, ব্যক্তিগত যোগ্যতা, বংশ মর্যাদা, পারিবারিক অবস্থা ইত্যাদির ভিত্তিতে দেনমোহরের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। অপর দিকে বরের আর্থিক ক্ষমতার দিকটাও বিবেচনায় রাখা হয়। এসব দিক বিচার বিবেচনা করেই মূলতঃ দেনমোহর নির্ধারণ করা হয়। উল্লেখ্য, দেনমোহর একবার নির্ধারণ করার পর এর পরিমাণ কমানো যায় না, তবে স্বামী ইচ্ছা করলে তা বাড়াতে পারেন। (জহুরান বিবি বনাম সোলেমান খান, ১৯৩৩, ৫৮ ক্যাল.জে. পৃষ্ঠা, ২৫১)। তবে দেনমোহর বিয়ের পূর্বে, বিয়ের সময় এমনকি বিয়ের পর নির্ধারণ করা যেতে পারে। (কামরুন্নেসা বনাম হুসাইনি বিবি, ১৮৮০, ৩ অল. পৃষ্ঠা, ২৬৬)

কিন্তু নির্ধারিত দেনমোহরের পরিমাণ কোন ক্রমেই দশ দিরহামের কম হবে না। (সাহাবুদ্দিন বনাম উমাতুর রসুল, ৬০, এপি, পৃষ্ঠা-৫১১)। স্ত্রী দেনমোহরের দাবীতে মামলা করলে, দেনমোহরের পরিমান বেশী বা স্বামীর সামর্থ্যরে উর্ধ্বে এরুপ কথা স্বামীর আত্মপক্ষ সমর্থনের অজুহাত হিসেবে গ্রাহ্য হবে না। (সুলতান বেগম বনাম সায়াজ উদ্দিন, ১৯৩৬, ১৬১ আইসি. পৃষ্ঠা, ৩০০)। মোদ্দা কথা হলো, কোনো বিবাহে দেনমোহর ধার্য্য না হয়ে থাকলেও স্ত্রী মর্যাদা মাফিক দেনমোহর পাওয়ার অধিকারিণী। (২০ ডিএলআর, পৃষ্ঠা, ২৭)।

দেনমোহর মওকুফ
স্ত্রী দেনমোহর মাফ করতে পারে। তবে মাফ করার সময় স্ত্রীর পূর্ণ সম্মতি থাকতে হবে। একই সাথে তাকে স্বেচ্ছায়, কোন রকম প্ররোচণা ছাড়া মুক্তমনে দেনমোহর মাফ করতে হবে। (ফায়ানী বেগম বনাম ওমরাভ বেগম, ১৯০৮, ৩২ বম. পৃষ্ঠা, ৬১২)। তবে পাকিস্তান ল ডাইজেস্ট (১৯৫৯) লাহোর এর ৭১০ পৃষ্ঠায় সন্নিবেশিত করা হয়েছে যে স্ত্রীকে মোহরানা দেয়া হয়েছে কিনা যিনি তা পরিশোধ করেছেন তাকেই তা প্রমান করতে হবে।

স্ত্রী তালাক দিলেও দেনমোহর পাওয়ার অধিকারিনী
স্ত্রী যদি স্বামীকে আগে তালাক দেন, সে ক্ষেত্রেও অর্থাৎ স্বামী বা স্ত্রী যিনিই তালাক দিন না কেন, দেনমোহরের টাকা অবশ্যই স্ত্রীকে দিতে হবে। তবে বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যৌণ মিলন না হয়ে থাকলে হলে কিংবা স্বামীর মৃত্যু হলে স্ত্রী অর্ধেক পরিমান দেনমোহর পেতে অধিকারিণী। (তাজবি বনাম নাতার শেরীফ, ১৯৪০, ২ এম.এল. জে. পৃষ্ঠা, ৩৪৫)

দেনমোহর আদায়ের পদ্ধতি
দেনমোহর দুই প্রকার। একটি তাৎক্ষণিক দেনমোহর, যা স্ত্রীর চাওয়ামাত্র পরিশোধ করতে হবে। আরেকটি হচ্ছে বিলম্বিত দেনমোহর। বিলম্বিত দেনমোহর বিবাহবিচ্ছেদ অথবা স্বামীর মৃত্যুর পর পরিশোধ করতে হয়। এ ছাড়া স্বামী সালিসি পরিষদের অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করলে স্ত্রীকে বিলম্বিত দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে। সাধারণত দেনমোহরের কিছু পরিমাণ বিয়ের সময় তাৎক্ষণিক দেনমোহর হিসেবে দেওয়া হয় এবং তা কাবিননামায় লিখিত থাকে। বাকিটা বিলম্বিত দেনমোহর হিসেবে ধরা হয়। স্ত্রী পারিবারিক আদালতে মামলা করে দেনমোহর আদায় করতে পারবেন। দেনমোহর দাবি করার পর স্বামী ওই দাবি পরিশোধ না করলে স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে পৃথক থাকতে পারবেন এবং ওই অবস্থায় স্বামী অবশ্যই তাঁর ভরণপোষণ করতে বাধ্য থাকবেন। (১১ ডিএলআর, পৃষ্ঠা, ১২৪)। এ ছাড়া বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গেলে স্ত্রী তাঁর দেনমোহর আদায়ের জন্য পারিবারিক আদালতে মামলা করে তা আদায় করতে পারেন। তবে অবশ্যই তালাক হওয়ার তিন বছরের মধ্যে মামলা করতে হবে।

স্ত্রী তালাক দিলেও দেনমোহর পাওয়ার অধিকারিনী
স্ত্রী যদি স্বামীকে আগে তালাক দেন, সে ক্ষেত্রেও অর্থাৎ স্বামী বা স্ত্রী যিনিই তালাক দিন না কেন, দেনমোহরের টাকা অবশ্যই স্ত্রীকে দিতে হবে। তবে বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যৌণ মিলন না হয়ে থাকলে হলে কিংবা স্বামীর মৃত্যু হলে স্ত্রী অর্ধেক পরিমান দেনমোহর পেতে অধিকারিণী। (তাজবি বনাম নাতার শেরীফ, ১৯৪০, ২ এম.এল. জে. পৃষ্ঠা, ৩৪৫)

লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, আইন গ্রন্থ প্রণেতা, গবেষক ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল। Email:seraj.pramanik@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel